লাল আর সবুজ: সমান্তর প্রতিকৃতি বিশ্লেষণের চোখে বাংলার ও তৎসন্নিহিত ভাষার ফাই-নিষ্ক্রিয় বিশেষ্য
লাল আর সবুজ: সমান্তর প্রতিকৃতি
বিশ্লেষণের চোখে বাংলার ও তৎসন্নিহিত ভাষার ফাই-নিষ্ক্রিয় বিশেষ্য
সারসংক্ষেপ
বিভক্তিবহুল আর বিভক্তিরিক্ত আধুনিক ভারতীয় ভাষায় ফাই-গুণের বিতরণের প্রশ্ন
নিয়েই এই প্রবন্ধ। [বিজো ক্তি চ্চ বিজো ক্তি] নির্মিতিতে – যেখানে বিজো বিশেষ্যজোট,
ক্তি বিভক্তি, চ্চ সমুচ্চয়বাচক অব্যয় – কী কী অবস্থায় প্রথম ক্তি-টাকে বাদ দেওয়া
চলে সেই প্রশ্নের সূত্রে এখানে আগেকার কায়াবাদী গবেষণায় প্রস্তাবিত সমান্তর
প্রতিকৃতির ধারণার ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়েছে। যেকোনো ভারতীয়-আর্য ভাষাতেই ওই
অবস্থানের কোন্ বিজো-র পক্ষে ক্তি বাদ দেওয়া সম্ভব আর কোন্ বিজো-র পক্ষে অসম্ভব,
সেসব তফাতও ফাই-গুণের ওপরেই নির্ভর করে; ভাষাটা বিভক্তিবহুল না বিভক্তিরিক্ত তাতে
তেমন এসে যায় না। যে যে ভারতীয়-আর্য ভাষার বিভক্তিহীন প্রতিবেশী আছে তাদের বেলায়
দেখতে পাই বর্গিকমনস্ক টাউ বা ট্যাক্সোনমিক গুণগুলোকে নিয়ে একটা বিকল্প
বিক্রিয়াতন্ত্রের আয়োজন রয়েছে। কয়েকটা বৈশিষ্ট্য যুগপৎ ফাই-গুণের আর টাউ-গুণের
মর্যাদা পায়। শব্দরূপের এরকম ইতস্ততকে বুঝতে সমান্তর প্রতিকৃতি সাহায্য করে।
পুণে শহরের ডেকান কলেজে মুখে মুখে শোনা গেছে প্রবোধ পণ্ডিত নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা শেখানোর সময় লাল আর সবুজের একটা খেলা খেলতেন। খেলাটার কীরকম গুটি, কীরকম দান?
হিন্দি-উর্দু আর অন্যান্য বিভক্তিবহুল ভারতীয় আর্য ভাষায় বিশেষণ বর্গের দুই উপবর্গ। হরা ‘সবুজ’এর শব্দরূপে স্বরধ্বনির নিয়ন্ত্রিত তারতম্য। হরী লাঠী ‘সবুজ লাঠি’র স্ত্রীলিঙ্গের সঙ্গে তুলনীয় পুংলিঙ্গ হরা ডণ্ডা ‘সবুজ ডাণ্ডা’ যার অন্ত্য আ স্বরধ্বনি হরে ডণ্ডে সে ‘সবুজ ডাণ্ডা দিয়ে’র মতো তির্যক রূপে পালটে এ হয়ে যায়। অপর উপবর্গের নমুনা লাল ‘লাল’এর প্রতিগ্রহে কোনো তারতম্য নেই: লাল লাঠী, লাল ডণ্ডা, লাল ডণ্ডে সে, সর্বত্র খালি লাল ।
বোর্ডে এসব লিখতে গিয়ে প্রবোধ পণ্ডিত লাল চক দিয়ে স্বরান্তরণের ট্রাফিক থামাতেন, সবুজ চকের সিগনাল দেখিয়ে আবার চালু করতেন। মারাঠি গুজরাটি সিন্ধি পাঞ্জাবি প্রভৃতি সমস্ত বিভক্তিবহুল নব্য ভারতীয়-আর্য ভাষা শেখানোর কাজে এই খেলাটার উপযোগিতার দিকে নজর টেনেছিলেন পণ্ডিত; সবগুলো ভাষাতেই ‘সবুজ’ আর ‘লাল’বাচক বিশেষণের একইরকম বৈশিষ্ট্য, এটা বেশ কাজে লাগে।
বিশেষণদের বেলায় অন্তত হিন্দি-উর্দুতে সাধারণীকরণটা এত সোজা যে
ভাষা-শিক্ষার্থী মেধাবী না হলেও বুঝতে পারবেন। আ-কারান্ত বিশেষণ হলেই সবুজ, নইলে
লাল। বিশেষ্যদের গল্পটাতে অনেক কথা এসে পড়ে। অবান্তর খুঁটিনাটি বাদ দিয়ে বলতে পারি
আ-কারান্ত কিছু বিশেষ্য সবুজ (অতির্যক একবচন লড়কা ‘ছেলে’র সঙ্গে তুঃ লড়কে
সে ‘ছেলের সঙ্গে’র তির্যক লড়কে) আর বাকিগুলো লাল, যেমন রাজা সে ‘রাজার
সঙ্গে’।
শিক্ষাদানের কাজে সুবিধাজনক খেলা হিসেবে লাল-সবুজ ট্রাফিকের রঙ যে মজার সেটা নাহয়
মানছি। কিন্তু ভাষা বিশ্লেষণের কাজেও লাগে নাকি?
সত্তরের দশকের পর থেকে সঞ্জননী বাক্যতত্ত্বের কিছু কর্মী ধরে নেন যে কয়েকটা ভাষার কোনো কোনো বিশেষ্যের গায়ে যদি পদাণুতাত্ত্বিক প্রপাতের বিভক্তি থাকে তাহলে বাক্যতাত্ত্বিক প্রপাত নিশ্চয়ই বিশেষ্যমাত্রেরই নিত্যসঙ্গী। ওই উপকল্পের উগ্র সংস্করণের জমানা শেষ। ভারতীয়-আর্য ভাষাপরিবারের বেলায় লাল আর সবুজের কথা যদি পাড়তে চাই তাহলে এখন পাড়াই সমীচীন।
এই লেখায় প্রস্তাবিত বর্ণনায় পণ্ডিত হিন্দি-উর্দুর মতো যেসব ভাষার সূত্রে লাল আর সবুজের খেলা সাজিয়েছিলেন সেগুলো বাক্যবিচারে সবুজ বলে গণ্য। তাদের বাংলা আর অসমিয়ার মতো যেসব পূর্বাঞ্চলীয় ভগিনী, তারা বাক্যবিচারে এমনিতে লাল কিন্তু সবুজ ময়দান বাঁচিয়ে রেখেছে। বোড়ো-র মতো যেসব ভোটবর্মি প্রতিবেশীর প্রভাবের ফলে লাল আর সবুজের এই মানচিত্র তারা যে বাক্যবিচারে লাল এই উপকল্প মনোযোগ্য ঠিকই, কিন্তু বর্তমান লেখার উপজীব্য নয়।
যে নৈদর্শিক সমস্যাকে ঘিরে বর্তমান উপস্থাপনের পরিকল্পনা তার মূল জায়গাটা হল বিভক্তিযুক্ত সংশ্রয়, যার দৃষ্টান্ত বিশেষ্যের বেলায় (১ক)/(৩ক) আর সর্বনামের বেলায় (২ক)/(৪ক), এবং ন্যাড়া সংশ্রয়, যার উদাহরণ বিশেষ্যের বেলায় (১খ)/(২খ) আর সর্বনামের বেলায় অচল (২খ)/(৪খ):
১ক রামকে আর শ্যামকে
১খ রাম আর শ্যামকে
২ক আমাকে আর তোমাকে
২খ *আমি আর তোমাকে
৩ক রাম কো ঔর শ্যাম কো
৩খ রাম ঔর শ্যাম কো
৪ক মুঝ কো ঔর তুঝ কো
৪খ *মুঝ ঔর তুঝ কো
অন্তত এই উপাত্তের ভিত্তিতে এই সাধারণীকরণে উপনীত হতে পারি যে লাল আর ভাঙা-লাল
ভাষার প্রতিনিধি বাংলায় এবং সবুজ গোত্রের প্রতিনিধি হিন্দি-উর্দুতে বিভক্তিহীন বা
‘ন্যাড়া’ সংশ্রয় বিশেষ্যের বেলায় সচল কিন্তু সর্বনামের বেলায় অচল। কিন্তু
উপরে-উপরে তাকিয়ে দেখে কবেই বা বৈশ্লেষণিক যাথার্থ্যে পৌঁছোনো যায়।
এই প্রবন্ধে যে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে তাতে প্রচলিত ফাই-গুণের পাশাপাশি টাউ অর্থাৎ ট্যাক্সোনমিক গুণের আমদানি, এদের কাজ বিশেষ্যবর্গের ভিতরে বিভিন্ন উপবর্গ আলাদা করে চেনা, যেমন মানববাচক, অপ্রাণিবাচক, কাঠিবাচক, দাঁতবাচক। সবুজ অর্থাৎ টাউ-ঘুমন্ত হিন্দি-উর্দু ভাষাগোত্রে বচন-লিঙ্গ-মনস্ক প্রতিফলন-তন্ত্রের দায়িত্বে আছে এক ঝাঁক ফাই-গুণ। লাল ওরফে ফাই-ঘুমন্ত বোড়ো গোত্রে প্রতিফলন নেই, রেফারেন্স বোঝাবার কাজ টাউ-গুণের। ভাঙা-লাল বাংলা গোত্রের বেলায় দেখি এমন প্রতিফলন-তন্ত্র যাতে বচন বা লিঙ্গ নেই, ফাই গুণের পাশাপাশি টাউ গুণেরও দৌরাত্ম্য।
হিন্দি-উর্দু (৩ক), (৪ক)-য়ে দেখি প্রপাতের নিদর্শন পদের বাইরের হালকা অনুসর্গ
‘কো’, পদের গায়ে তির্যক গুণ। (দাশগুপ্ত, ফোর্ড ও সিং ২০০০এ দেওয়া যুক্তির
ভিত্তিতে) ধরে নেব হিন্দি-উর্দুতে তির্যক এক অনতিপ্রপাত যার কাজ ‘কো’র মতো হালকা
অনুসর্গের সঙ্গে কিংবা ‘পর’এর মতো আস্ত অনুসর্গের সঙ্গে প্রতিফলন ধারণ করা। কিন্তু
বাংলার কোনো তির্যক পদাণুবাহন নেই; (১ক), (২ক)-য়ে দেখি পদের অঙ্গীভূত প্রপাতাঙ্কন।
ফাই-গুণের সঙ্গে প্রপাতের আর প্রতিফলনের খেলা এ দুই ভাষাগোত্রে কীভাবে মঞ্চস্থ হয়? হিন্দি-উর্দু সবুজ, সেখানে বিশেষণ তার সন্নিহিত বিশেষ্যের দেখাদেখি ধারণ করে তির্যক অনতিপ্রপাত; (৩খ) বাড়িয়ে (৩খ’) অবদি গেলে দেখতে পাই তির্যকত্ব খালি সর্বনামেরই থাকে তা নয়, বিশেষ্যের গায়েও বসে:
৩খ’ লম্বে রাম ঔর মোঠে শ্যাম কো
যদি পদাণুবিচারে সবুজ বিশেষ্য লড়কা আর বুডঢা বেছে নিই তাহলে বিশেষ্যের গায়েও তির্যকত্ব পরিষ্কার ফুটে ওঠে; একবচন (৫)এর সঙ্গে বহুবচন (৬) তুলনীয়; পদাণুতত্ত্বের দিকে নজর রেখে তির্যক অবধেয় (৬) আর তার অতির্যক অভিধেয় দোসর (৭)কে মিলিয়ে দেখুন:
৫ লম্বে লড়কে ঔর
মোঠে বুডঢে কো
৬ লম্বে লড়কোঁ ঔর
মোঠে বুডঢোঁ কো
৭ লম্বে লড়কে ঔর
মোঠে বুডঢে
বাংলায় কিন্তু তির্যক অনতিপ্রপাত মানবার কোনো যুক্তি নেই: বিশেষণও প্রতিফলনবিহীন (চিংকুয়ে (২০০৯)-য়ে পরিবেশিত তথ্যাদির প্রাচুর্য সত্ত্বেও হিন্দির সঙ্গে বাংলার এই তফাতের পরিস্ফুটনের কাজে ব্যবহার্য কোনো শীলন বা প্যারামিটারের খোঁজ পাওয়া যায় না), বিশেষ্যের আর-কোনো প্রাসঙ্গিক ভাবান্তরও দেখা যায় না। বাংলার না আছে দৃষ্টিগোচর অনতিপ্রপাত, না আছে বিশেষ্যের সঙ্গে তার জোটসঙ্গীদের অন্য কোনো ধরনের প্রতিফলন:
৮ লম্বা ছেলে আর মোটা বুড়োকে
৯ লম্বা ছেলে আর মোটা বুড়োদের
১০ লম্বা ছেলে আর
মোটা বুড়োরা
অবধেয় (৯) আর অভিধেয় (১০) মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় বিশেষ্যের বহুবচন প্রদর্শনের আদল অবধেয়র বেলায় ষ্যদের আর অভিধেয়র ক্ষেত্রে ষ্যরা – এই শব্দরূপগুলো প্রকারতত্ত্বের বিচারে বিভক্তিমনস্ক তথা সংলয়শীল (ফিউশনাল)। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে বাংলায় বহুবচনের এই প্রদর্শন (৯) বা (১০)-এর মতো একবারও করা যায় আবার (৯ক), (১০ক)-র মতো দুবারও করা সম্ভব:
ওদিকে হিন্দি-উর্দুর একখানা প্রদর্শক হলে চলে না, বহুবচন তির্যক সূচকের দ্বিরুক্তি না করে পারে না, (৬) আর (৭) দ্রঃ। বাংলা (৮)-(১০)কে কেন তাহলে অর্ধেক লাল ভাবব? তার কারণ, (৮), (১০) এবং অচল *লম্বা ছেলেরা আর মোটা বুড়োদের (যাকে বলব ‘৯খ’)-এর সঙ্গে মস্ত তফাত পাচ্ছি (১১)-(১২)র মতো সম্পূর্ণ লাল বর্গিক ভিত্তিক দৃষ্টান্তের, সেখানে যে আদল দেখা দিচ্ছে তার আকল্প ষ্যগুলো, আদলগুলো বাঁকা হরফে সূচিত:
১১ক লম্বা ছেলেগুলো আর মোটা বুড়োগুলো: ণ
ষ্য.র্গি চ্চ ণ ষ্য.র্গি
১১খ লম্বা ছেলে আর মোটা বুড়োগুলো: ণ
ষ্য চ্চ ণ ষ্য.র্গি
১২ক লম্বা ছেলেগুলোকে আর মোটা
বুড়োগুলোকে: ণ ষ্য.র্গি.প্র চ্চ ণ ষ্য.র্গি.প্র
১২কʹ লম্বা
ছেলেগুলো আর মোটা বুড়োগুলোকে: ণ ষ্য.র্গি চ্চ ণ ষ্য.র্গি.প্র
১২খ লম্বা ছেলে আর মোটা বুড়োগুলোকে: ণ ষ্য চ্চ ণ ষ্য.র্গি.প্র
বাঁকা হরফের ভিতরে আবার মোটা হরফের আমদানি করে ধরিয়ে দিয়েছি পদাণুবাক্যতত্ত্বে ঐচ্ছিক লোপের ইতস্তত। (৮)-(১০) আর অচল (৯খ)-য়ে পাই ফাই-গুণাক্রান্ত অর্ধানচ্ছ প্রতিগ্রহ; তার বদলে পুরো টাউ-গুণাক্রান্ত স্বচ্ছ প্রতিগ্রহের দেখা পাই (১১)-(১২)য়। তবে (৮)-(১০) আর (৯খ) যে মধ্যবর্তী এই ধন্দ মেটাতে গিয়ে যেকোনো বাক্যভাষ্যই হিমশিম খাবে; ওরা না ফাই-সর্বস্ব, না টাউ-সর্বস্ব। ষ্যরা হিন্দি-উর্দুর কায়দার ফাই-বহুবচনী আদল (তাই (৯খ) নিষিদ্ধ), অথচ সে (১০)এ ষ্য চ্চ ষ্যরা আদলটাকে পরোয়ানা দিচ্ছে, প্রথম রা-র লোপে রা কাড়ছে না, এই বিকল্প হিন্দিতে অচিন্ত্য। এই উভবলতার কী ছবি আঁকব?
দাশগুপ্ত, ফোর্ড ও সিং (২০০০)এ প্রবর্তিত কায়াবাদী
কার্যক্রম মোতাবেক প্রস্তাব করছি যে মানববাচকের বহুবচন সূচনের ষ্য/ষ্যরা পদ
নির্মাণ নকশাটা ষ্যরা আদলের গায়ে বহুবচনের ফাই লক্ষণ ছাড়াও মানববাচক আর
সমূহবাচকের টাউ লক্ষণ পরিয়ে দেয়। ষ্যরা/ষ্যদের নকশার কাজ অভিধেয়র সঙ্গে অবধেয়-উদ্ধেয়র
যাতায়াতের সুষ্ঠু বিবরণ দেবার জন্যে ওই নকশাটার দু দিকেই বহুবচনের টাউ গুণ বসানো
কিন্তু সমান্তর প্রতিকৃতি বিশ্লেষণের খাতিরে একই ব্যূহে টাউ আর ফাই গুণকে পাশাপাশি
রেখে সমান মর্যাদা দেওয়া।
না হলেই নয় পর্যায়ের এইটুকু পুঁজি সম্বল করেই এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হওয়া যাচ্ছে যে বাংলা মনুষ্যবাচক বহুবচন (১০)এর বেলায় সাপের মুখে ফুঁ দিয়ে ষ্য/ষ্যরা
নকশার জোরে টাউ অধিকার আদায় করেও (৯খ)য়ের ক্ষেত্রে বেদের মুখে হাঁচতে পারে অর্থাৎ ষ্য/ষ্যদের
নকশার ভিত্তিতে ফাই গুণের সঙ্গে প্রপাতের বিক্রিয়ায় লিপ্ত হতে পারে।
এই যদি (৯খ)য়ের স্বরূপ, তাহলে কিন্তু বিশেষ্যের সঙ্গে সর্বনামের অপ্রতিসাম্যের গল্পটার উপর কলম না চালালেই নয়। (৪খ) সর্বনামকে ঘিরে নির্মিত বলে অচল নয়, ওকে তাহলে আটকে দিচ্ছে বিবিধ গুণের যাতায়াতের সুবিধে অসুবিধে। কী এই অসুবিধে যা (৪খ)কে (৩খ) থেকে আলাদা করে দেয়?
আমি দাবি করছি যে সংশ্রয়ী পরম্পরায় লেজকাটা সংশ্রিত তখনই বৈধ যখন সে গুণের হিসেবের খাতা বন্ধ করতে পেরেছে; খাতা বন্ধের হিসেবটাই ফাইতন্ত্রে আর টাউতন্ত্রে দুরকম। (৪খ)য়ে মুঝ-এর খাতা খোলা থেকে যাচ্ছে কারণ প্রথম তরফ, একবচন আর অনতিপ্রপাত এই ফাই-গুণ-সমষ্টিটাতে না আছে পদাধেয় (যা থাকলে বাচনাঙ্কলাভ সম্ভব হত, একথা বলে বাচনাঙ্কনির্দেশের কোনো সূচ্যগ্রবাদপূর্ববর্তী স্বরূপতত্ত্বে ভরসা রাখতে বলছি ভাবলে ভুল ভাবছেন), না আছে প্রপাতঘটিত উপব্যূহের পূর্ণাঙ্গ গুণাঙ্কন (মুঝএর প্রপাতও নিরূপিত নয়, তার সঙ্গে কোনো অনুসর্গবিশেষের গাঁটছড়াও বাঁধা নেই)। (৪ক) ফাইয়ের খাতা বন্ধ করে প্রপাত-সমাঙ্কনের আশ্রয় নিয়ে; (৩খ) বৈধ যেহেতু রাম তির্যক বলে প্রপাতের বিচারে অনতিনিরূপিত হওয়া সত্ত্বেও পদাধেয় থাকায় বাচনাঙ্কিত।
এই বিচারভঙ্গি বাংলায় (১ক, খ), (২ক, খ)র কী ছবি আঁকবে? (২খ)র বেলায় ফাই
তন্ত্রের ব্যর্থতা ঢাকবার জন্যে সমান্তর প্রতিকৃতির সরঞ্জাম ঝাঁপিয়ে পড়ে
টাউতান্ত্রিক সমাধান বসিয়ে দিচ্ছে না কেন?
যেখানে ফাই হিসেবের খাতা খোলা থাকছে সেখানে বিশেষ্যজোটের পক্ষে বাচনাঙ্ক গায়ে দিয়ে লেজকাটা সংশ্রিতের আসনে বসা তখনই সম্ভবপর যখন বর্গিক আদল এসে রেফারেন্সের পর্যায়ে টাউ হিসেবের খাতা বন্ধ করে দেয়। (২খ)য়ে এ কাজ হবে না, কারণ প্রথম তরফ একবচনের সর্বনাম আমি-তে কোনো রকম বর্গিক আদল ঘটিত নামগন্ধই নেই। সর্বনামকে এরকম আধেয় যে বাচনাঙ্কনে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে দেয় তার সাক্ষী (১৩) আর (১৪):
১৩ক ওকে আর একে
১৩খ *ও আর একে
১৪ক ওটাকে আর এটাকে
১৪খ ওটা আর এটাকে
(১৩খ) বনাম (১৪খ)য়ের বনামজুটি দেখে
জানতে পারি যে বাংলায় যাকে বেদাগ বর্গিক আদল বলা যায় (কিংবা পদাণুবাদী ঘরানার
ভাষায় ‘বেদাগ বর্গিক পদাণু’) সেই ষ্যটা-র আমদানি করা গুণগুলোও সংশ্রয়ী
নির্মিতিতে প্রথম সংশ্রিতের গায়ে প্রপাতের সূচক না থাকলেও তাকে স্রেফ রেফারেনশিয়াল
পরিচিতির দৌলতেই বাচনাঙ্কনের পরোয়ানা দিয়ে দেয়। এইখানে দেখতে পাচ্ছি, খাতা বন্ধের
ফাই ব্যবস্থা কাজ করল না দেখে টাউ তন্ত্র এগিয়ে এসে খাতা বন্ধ করে বাঁচিয়ে দিল।
কৃতজ্ঞতাস্বীকার
ভারতীয় রাশিবৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের ‘সাবস্ট্যানটিভিস্ট লেকসিকোলজিকাল স্টাডি অভ
বাংলা’ গবেষণাপ্রকল্পে লব্ধ কিছু ফলাফলের এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রস্তুত
করার কাজে এসপেরান্তা স্তুদফোনদাঝোর কাছেও লেখক ঋণী, কায়াবাদের বিকাশ সাধনের জন্যে
দেওয়া অনুদানের বাবদে। তাঁদের দায়িত্ব যথারীতি সীমাবদ্ধ।
আকরপঞ্জি
Cinque, Guglielmo (2009). The Syntax of Adjectives: A
Comparative Study. Cambridge, Mass.: MIT Press.
Dasgupta, Probal; Ford, Alan; Singh, Rajendra (2000). After
Etymology: Towards a
Substantivist Linguistics. München: Lincom Europa.
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home