Saturday, February 18, 2012

Shaahitter baahon, upobhaashaa, aar mitobaak shanketaayon


সাহিত্যের বাহন, উপভাষা, আর মিতবাক সংকেতায়ন

প্রবাল দাশগুপ্ত

(বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, ২২।২।২০১২, উপভাষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক চর্চাসত্রের উদবোধন)

    আধুনিক নেশন-রাষ্ট্রের সূত্রপাত আর সেই রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের উন্মেষের কাহিনি। মোটা দাগের একটা কালপঞ্জি কষলে দেখতে পাই, নৃতত্ত্বের অধীতব্য যে সমবায় থেকে এক বা একাধিক নেশনের উদ্ভব সেই এথনিক সমবায়ের হিসেবের প্রতিষঙ্গী চেহারায় গড়ে উঠেছিল ভাষাতত্ত্বের দ্বিকালীন বা ডায়াক্রনিক প্রথম সংস্করণ, আঠারো আর উনিশ শতকে। যখন সোস্যুর ব্লুমফিল্ড সাপিরদের হাতে গ্রন্থনবাদ ওরফে স্ট্রাকচারালিজম আসর জমিয়ে বসছে, নেশনে নেশনে সাম্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী সেই বিংশ শতাব্দীতে আসলে গণতান্ত্রিক নেশন-রাষ্ট্রের মঞ্চে ভাষাতত্ত্ব কী ভূমিকায় নেমে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগতে পারে, অসচেতন একটা কোনো জায়গায় সেই প্রশ্নেরই মীমাংসা রচিত হচ্ছে। আর সঞ্জননী ব্যাকরণের মুহূর্তটা মানবাধিকার-চেতনার। তার প্রৈতিতে সঞ্জননী মঞ্চের পুরোভাগে এসে দাঁড়ায় ব্যক্তিমানুষ, যার মস্তিষ্কেই নাকি ভাষার অবস্থিতি।
    চমস্কির সঞ্জননী বিপ্লবের কাজ এখনও শেষ হওয়া তো দূরের কথা, বেশ কিছু কর্মমণ্ডলে কাজটা সত্যি বলতে শুরুই হয়নি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় বুঝি কঠিন নতুন অঙ্কের ধাক্কা খেয়ে অনেকে দূরে সরে গেছে বলে পোশাকি গণিতনির্ভর ভাষাতত্ত্বের যেগুলো আশপাশের কাজের জায়গা, যেমন ভাষা শেখানো অথবা অনুবাদ কিংবা সাহিত্যতত্ত্ব, সেইসব অঞ্চলের বেশ কিছু মানুষ সঞ্জননী ভাষাতত্ত্বের আকৃত সরঞ্জাম আয়ত্ত করতে পেরে ওঠেননি তাই এই বিপত্তি। পরের প্রজন্মের বাচ্চারা পেট থেকে পড়েই ওসব শিখছে অথবা আজ বাদে কাল শিখবে, তখন মুশকিলটা সামলে যাবে। তবে ওই ধরনের কর্তার ইচ্ছেয় কর্মের ব্যবস্থাপনের রাস্তা ধরে অবশ্য চিন্তার বিপ্লব এগিয়ে যেতে পারে না। সঞ্জননী ভাবনার সুরে যাতে সবাই সুর মিলিয়ে নিতে পারেন অথবা পরিস্ফুট প্রতিবাদী সুর বেছে নিয়ে আরেকভাবে আসর জমিয়ে তুলতে পারেন, বিশেষত সাহিত্যের বিপুল জনসংযুক্ত কর্মক্ষেত্রে যাতে সেই সুরের আগুন লাগে, সেজন্যে ভাষাতাত্ত্বিকদের একটা খ্যাপার মতো গেয়ে বেড়ানোর দায়িত্ব আছে। তাঁরা সেটা পালন করতে পেরে না উঠলে মানবাধিকার সচেতন যুগের উপযোগী মনোভঙ্গি আমাদের চিন্তায় বাসা বাঁধতে দেরি করবে। সেই দেরির কুফল ফলতে থাকবে সমাজের, সংস্কৃতির, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা জায়গায়।
    কাজের এইরকম একটা জায়গা উপভাষা। আপনাদের সামনে রাখব প্রত্যেকটা গ্রন্থনবাদী পাঠ্যবইয়ে পুনরাবৃত্ত পুরোনো একখানা পারিভাষিক শব্দবন্ধ, দেখুন তো বুঝতে পারেন কিনা – কথাটা হচ্ছে ‘স্ট্যাণ্ডার্ড ডায়ালেক্ট’, ধরে নিন বাংলা করলাম ‘প্রমিত উপভাষা’। আমার মনে হয় রাজার নতুন পোশাক দেখতে না পেয়ে যেরকম বলে ওঠার কথা, রাজামশাইয়ের গায়ে তো কোনো পোশাকই নেই, এটা কোনদেশি তামাশা হচ্ছে, তেমনি আমাদের দায়িত্ব হল জোরে জোরে বলা, দুঃখিত, বুঝতে পারলাম না, তার কারণ বোঝার কিছুই নেই, ‘প্রমিত উপভাষা’ কথাটা স্ববিরোধী, স্পষ্টতই একরকম সোনার পাথরবাটি।
    আমরা সবাই গ্রন্থনবাদী শিক্ষাদানের ফসল, তাই আমাদের মাথার ভিতর থেকে মাস্টারমশাইরা তাঁদের ধীর স্থির গলায় যে জবাব দেন সেটা শুনতে পাই অবিলম্বে। ‘ঠিক যেমন ল ধ্বনিকল্পের মূর্ধন্য ধ্বনিবিকল্প শোনা যায় পাল্টা-শব্দে, আর তালব্য ধ্বনিবিকল্প পাই লালচে-পদে, কিন্তু দন্তমূলীয় ধ্বনিবিকল্পটা পালা-শব্দে শুনতে পেয়ে চিনতে পারি যে এটাই ওর সবচেয়ে প্রচলিত ধ্বনিবিকল্প, এটাই বেদাগ বা আনমার্কড, অন্য-দুটো দাগি কিংবা মার্কড, ঠিক তেমনিই মারাঠি ভাষার যে উপভাষা পুণে এলাকায় প্রচলিত সেটাই মারাঠির বেদাগ চেহারা অতএব সকলের সুবিধার্থে জনপরিসরের সমস্ত কাজের জন্যে গৃহীত হয়েছে, যাকে বলে ভাষার প্রমিত বা স্ট্যাণ্ডার্ড চেহারা। নাগপুরেরটাকে উপভাষা বলা হবে, পুণেরটাকে উপভাষা বলা হবে না, এরকম কথা বলাটা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পর্যায়ের কাঁচা ভুল। ভাষাতত্ত্ব শিখে ফেলার পর তোমার এই ভুলে আটকে থাকা উচিত না। পুণের উপভাষাও মারাঠি ভাষারই অন্যতম উপভাষা – তফাত এটুকুই যে পুণেরটাই প্রমিত উপভাষা বলে গণ্য। দন্তমূলীয় ল-টাই যেমন ল ধ্বনিকল্পের বেদাগ ধ্বনিবিকল্প, ঠিক তেমনিই।’
    গ্রন্থনবাদ শিখতে আমাদের মাস্টারমশাইদের ভুল হয়নি। আমিও ওঁদের সঙ্গে একমত, তবে ওঁরা যে দিক থেকে ঐকমত্য চেয়েছিলেন তার উলটো দিক থেকে আমার মিল হচ্ছে ওঁদের মতের সঙ্গে। প্রমিত উপভাষা আর বেদাগ ধ্বনিবিকল্পের ধারণা-দুটো আমার মতেও বিলকুল সমান্তরাল। কিন্তু গ্রন্থনবাদীরা মনে করেন দুটো ধারণাই বৈধ, আর আমার বক্তব্য হল, দুটোই সোনার পাথরবাটি। ধ্বনিকল্পের কেন্দ্রেই যার বাসা সে জিনিসকেও   ‘ধ্বনি বি ক ল্প’ বলার মধ্যে একটা কারচুপি আছে। ইস্কুলের অধ্যক্ষ যেদিন হাজির নেই, সেদিন তাঁর বদলে সহযোগী অধ্যক্ষ কিংবা অনাদায়ে পদার্থবিজ্ঞানের মাস্টারমশাই প্রবীণতম বলে সেই সুবাদে আজকের মতো কাগজ সই করে কাজ চালিয়ে নেবেন। তিনি একজন ‘বিকল্প’। এই অবদি বুঝতে পেরেছি। ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে আমাকে মানতে হবে যে ‘কর্তাকল্পের’ তিনটে ‘বিকল্প’ – অধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যক্ষ, পদার্থবিজ্ঞানী? গ্রন্থনবাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমি কি বলতে বাধ্য যে অধ্যক্ষ নিজেও ‘কর্তা’ নন, অন্যতম ‘কর্তাবিকল্প’ মাত্র, তিনিও কাজ চালাচ্ছেন? তাঁর বেলাতেও যদি ‘কাজ চালানো’র কথা বলতে হয় তাহলে এই অতিবিনয়ের অলংকারশাস্ত্রে কার দায়িত্ব চুপি চুপি কার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
    আমি বলতে চাইছি, ধ্বনিকল্পের একরকম কেন্দ্রস্থলের কাজ করে দন্তমূলীয় ল। তার পাশে সত্যিই বিকল্প বলে গণ্য তালব্য আর মূর্ধন্য ল। দন্তমূলীয় ল নিজে যে জায়গাটার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে তাকে বলতে পারি ধ্বনিস্থল, ফোনীমিক সাইট। তেমনি মারাঠির স্থলটাকে পুণের উপভাষা বলা বিভ্রান্তিকর। ওটাই বেদাগ মারাঠি। নাগপুরি ইত্যাদি প্রকারভেদকেই উপভাষা বলে ধরে সবাই। ওগুলো দাগি। আমরা যদি কোনো কারণে এই বন্দোবস্তের রদবদল করতে চাই তাহলে সেই প্রক্রিয়ার আরম্ভেই বাস্তবিক পরিস্থিতির জরিপ লাগবে। তখন স্বীকার করা দরকার যে গল্পটা এইরকম। ‘সবাই পরস্পরের তুল্যমূল্য উপভাষা’ এই বাজে কথাটা বললে কারুরই স্বার্থরক্ষা হয় না।
    কেন্দ্রস্থলের এই তত্ত্ব নিয়ে চর্চা করার একটা রীতি কিছু দিন ধরে সাহিত্যতত্ত্বের কোনো কোনো মহলে প্রচলিত। সেই রীতিটাকে বিনির্মাণ বা ডিকনস্ট্রাকশন বলা হয়। তার প্রথম কয়েকটা সোপান হল, যেকোনো একটা গ্রন্থনে কেন্দ্রের সঙ্গে অনুচরের মুখ্য-গৌণ অধিক্রম বা হায়ারার্কি লক্ষ করা। তারপর কেন্দ্র যে সমগ্রের হয়ে কথা বলছে সেই প্রতিনিধিত্বের জায়গাটাকে চেপে ধরে তার প্রতিবাদ করা। পরের ধাপ হল অনুচরের অবস্থানে বসে কেন্দ্রকে বলা যে এই অধিক্রমটাকে উলটে দিয়ে অনুচরই স্থলের দায়িত্ব নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রকে ছুটি দিতে পারে, দিলে তখন ছবিটা এইরকম দেখায়। সেই ছবিটা সত্যিসত্যিই এঁকে দেখাতে পারলে তখন আমিও তোমায় এঁকে ছোটো করতে পারি, তুমিও আমায় এঁকে যে ছোটো করছিলে সেটাকে খেলা বলে চিনতে পারছ তুমি, এটা সাব্যস্ত হয়ে যায়, ফলে আদৌ খেলাটা তোমার আমার কারুর কাছেই জরুরি থাকে না আর।
    যেকোনো উপভাষার বেলাতেই দেখবেন, তার কোনো কোনো ভাষীর এমন একটা কাজ করতে খুব ইচ্ছে করে যে কাজের সঙ্গে বিনির্মাণের মিল সুস্পষ্ট। সে কাজটা হল, ওই উপভাষায় এমন মেজাজে সাহিত্য লেখা যেন কেন্দ্রস্থলে যে প্রমিত ভাষার রাজত্ব কায়েম হয়ে রয়েছে সেটাকে একেবারে অগ্রাহ্য করে উপভাষা একা একাই সম্পূর্ণ দুনিয়ার মানচিত্র আঁকতে পারে, যেন সে নিজের জোরেই গোটা একটা জেলার বা একাধিক জেলার শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে পারে।
    এই চেষ্টায় উপভাষার কর্মীরা যদি কোনো বিশুদ্ধিমার্গের শিকার হয়ে যান তাহলে সকলেরই অসুবিধে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের উদ্যোগে যাঁরা ব্রতী হয়েছেন তাঁরা প্রশংসনীয় সুবিবেচনা সহ ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটাকে এমন দিকে নিয়ে গেছেন যাতে উপভাষাভাষীদের পক্ষেও টেঁকসই মীমাংসায় পৌঁছনো সম্ভব হয়, আর যাঁরা মূলস্রোত বলতে অজ্ঞান সেই রাজধানীসর্বস্ব কেন্দ্রীয় প্রমিত ভাষার নাগরিকদের পক্ষেও সেই রফা মেনে নিতে অসুবিধে না হয়। এর একটা জরুরি এবং সযত্নে আকৃত দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ফরাসিভাষী কানাডায়।
কেবেক প্রদেশের বাসিন্দারা আগের জমানায় লক্ষ করেছিলেন, কানাডার ইংরিজিভাষী মূলস্রোতের মানুষজন তাঁদের ফরাসি বলেই অবজ্ঞা করে। আবার তাঁরা এও দেখতে পেয়েছিলেন যে ফরাসিদেশের লোকেরাও কিন্তু কেবেকের প্রাদেশিক ফরাসির উচ্চারণ আর শব্দচয়ন নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেন। ষাটের দশকে আমরা সবাই ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের দিকে নজর দিতে গিয়ে অনেকেই এটা খেয়াল করিনি যে সেই একই সময়ে কেবেক প্রদেশের মানুষ নতুন ধরনের বিপ্লবের সূত্রপাত করছেন। ইতিহাসে তাকে ‘শান্ত বিপ্লব’ বলা হয়েছে, ‘লা রেভোল্যুসিওঁ ত্রাঁকিই’। তাঁদের একটা লড়াই ছিল কানাডার ভিতরকার ভাষাগত ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে, সেটা কানাডার মাটিতে ফরাসি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সেই ব্যাপারে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন ফরাসিদেশের সহসংগ্রামীরা। কিন্তু অন্য দিকে কেবেকের নাগরিকদের প্রতিবাদ ছিল ফরাসিদেশের বহুদিনকার উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যের বিরুদ্ধেও, সেটা উপভাষার স্বাধিকার অর্জনের নতুন লড়াই।
উভয় রণাঙ্গনেই কেবেকীয়রা জয়ী হয়েছেন। কেবেক যাতে কেটে বেরিয়ে আলাদা দেশ হয়ে যাবার সংকল্প ত্যাগ করে সেজন্যে গোটা কানাডায় কাগজে কলমে দ্বিভাষিকতার আইন পাশ করা হয়েছে। সাগরপারের ফরাসিদেরও অনেককে বোঝানো সম্ভব হয়েছে যে কানাডার নিজস্ব ফরাসি ভাষা নিয়ে ইউরোপে ঠাট্টা-ইয়ারকি বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু নিজস্বতার স্বাক্ষর স্পষ্ট করতে গিয়ে যদি কানাডার ফরাসিভাষীরা নিজেদের গ্রামদেশের কথার বিশুদ্ধ পৃথক চেহারার সবটাই অক্ষরে অক্ষরে গণমাধ্যমে কিংবা বইয়ের পাতায় তুলে ধরতেন, তাহলে সেই প্রাদেশিক বিশুদ্ধিমার্গের চাপে ফরাসি ভাষা দু টুকরো হয়ে যেত। তখন ফরাসিদেশের কোনো প্রকাশনা কেবেকের পাঠকেরা ব্যবহার করতে পারতেন না। অল্পসংখ্যক অধিবাসীবৃন্দ একান্তই কেবেকীয় ভাষায় সব কাজ চালাবেন এই ওজন বইতে গেলে ফতুর হয়ে যেতেন। তাই ওঁরা করেছেন কী, মূলস্রোতের ফরাসির সঙ্গে কিছু নিজেদের উপাদান মিলিয়ে নির্মিত একটা সচেতন মিশ্র চেহারাকে জাতে তুলেছেন। ওঁদের টেলিভিশন দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় কেবেকেরই ফরাসি শুনছি, অথচ ফরাসির স্থলাভিষিক্ত মূল স্রোতের কারুর পক্ষে সে ভাষা বুঝতে অসুবিধেও হয় না কোথাও। কেবেকের স্বাক্ষরও থাকল, ফরাসির লাঠিও ভাঙল না।
শিক্ষাব্যবস্থা ঠিকমতো চালাবার জন্যে এই মিশ্র ভাষার ওরফে প্রমিত কেবেকীয় ফরাসির আলাদা ব্যাকরণ আর অভিধান বহুদিন আগেই লেখা হয়ে গেছে। দুই ফরাসির তফাত নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা হয় নিয়মিত।  বলা বাহুল্য নিজেদের হালকা কথাবার্তায় যাঁরা ওই প্রদেশেই অনেক পুরুষ ধরে আছেন তাঁরা গ্রামদেশের বিশুদ্ধ কেবেকীয় ভাষাই ব্যবহার করেন আজও – বহিরাগতরা যে একটা অক্ষরও বুঝতে পারেন না এ নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে হালকা তামাশা চলে। তাতে কারুর গায়ে ফোসকা পড়ে না।
এবার বাইরের মানুষের কাছে কোন শিক্ষার কী বিতরণ হবে সেই প্রসঙ্গে আসা যাক। যে বিদেশিরা ফরাসি শিখতে চায় তারা ষাটের দশকে বলা বাহুল্য ফরাসিদেশের কেন্দ্রীয় ফরাসি ছাড়া অন্য কিছু শেখার পাঠ্যবই পাবে বলে আশা করতে পারত না। যার যা সাধ্য সেই ভাষাটাই শিখত। কিন্তু আজকের দিনে তো ব্যাপারটা এই দাঁড়িয়েছে যে তুমি ফরাসিদেশের ফরাসি শিখবে না কেবেকীয় ফরাসি, এটা সত্যি একটা পরিস্ফুট প্রশ্ন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে তুমি কাজে হাত দিতে পারো না। বৃটিশ আর মার্কিন ইংরিজির বেলায় প্রশ্নটা পুরোনো এবং বহুদিনের অমীমাংসার জায়গা বলে স্বীকৃত। ফরাসির বেলায় এখনও বাইরের লোকেরা কেবেকে গিয়ে না পড়লে কেবেকীয় ফরাসি শেখে না, এইরকম দস্তুর চালু রয়েছে এখনও, কেন্দ্রীয় ফরাসির ঐতিহাসিক গরিমা তো এক দিনে যাবার নয়। কিন্তু আজ বাদে কাল কেবেকীয়রা তো এই ব্যাপারেও প্রতিবাদ করবেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা উগ্র তাঁরা বলে উঠবেন, ‘বাইরে থেকে আসা যাঁরা ফ্রান্সের ফরাসিটুকুই শিখে এসেছেন তাঁরা অযথা আশা করছেন যে কেবেকেও তাঁদের মৌখিক মুদ্রা চলবে, কেনই বা আশা করছেন, এটা পুরোনো অবিচারেরই আরেকটা চেহারা, অসহ্য, বিদেশিদেরও কেবেকে আসতে চাইলে কেবেকীয় ফরাসি দস্তুরমতো শিখে আসা আবশ্যিক’। বিদেশিদের কী শেখানো হবে এ বিষয়ে রফা কীরকম হতে পারে?
এবার আমার আজকের বক্তব্যের মূল প্রস্তাবটা পাড়তে পারছি। আমার তো মনে হয়, বিভিন্ন উপভাষার মধ্যে প্রভেদ থাকলেও যে ভাষার মোটা দাগের চেহারাটার এমন আদল ধরা যায় যে আদল সব উপভাষা থেকেই মোটামুটি সমান দূরত্বে অবস্থিত, সেইরকম ভাষার বেলায় একটা নতুন ধরনের রফার চেষ্টা করা উচিত। খুলে বলি। একেকটা বিশেষ উপভাষার  সব বিশেষত্বের পূর্ণাঙ্গ সুবিচারের পক্ষে নিশ্চয়ই একটা   সা নু পু ঙ্খ   সং কে তা য় ন   বা থিক ডিসক্রিপশন প্রণয়ন করা জরুরি। মানছি। কিন্তু সেইসব বিবরণের পাশাপাশি ওই ভাষার সবগুলো শাখা-চেহারা যে অভিন্ন গুঁড়ি থেকে বেরিয়েছে বলে ভাবা যায় সেই গুঁড়ির মূল আদলটারও একটা মোটা দাগের বিবরণ পেলে ভালো হয়। এইজাতীয় বিবরণকে বলতে চাই    মি ত বা ক    সং কে তা য় ন   ওরফে থিন ডিসক্রিপশন।
ফরাসির মিতবাক সংকেতায়ন কী কাজে লাগতে পারে সেটা হয়তো খুব বেশি খুলে না বললেও বুঝতে পারছেন এবার। বিদেশিরা যখন ফরাসি শিখতে চাইবে, তখন তাদের প্রথমে বলা হবে এমন মিতবাক সংকেতায়িত ফরাসি শিখতে যার মূলসূত্র কেবেকে আর ফ্রান্সে একই। সে কাজ করতে গিয়েও কিছু কিছু ব্যাপারে তফাতের কথা নিশ্চয়ই বলতে হবে। পনেরোকে ফরাসিদেশে ক্যাঁজ বলে, কেবেকে ক্যাঁইজ, ষোলোকে ফ্রান্সে সেজ বলে, কেবেকে বলে সেইজ, এসব জায়গায় তো কোনো মিতবাক রফা-নিষ্পত্তি করা যাবে না। ঠিকই। কিন্তু তাই বলে কোনো একটা উচ্চারণকে প্রমিত তকমা এঁটে শেখানোর জন্যে বলে বেছে নেবার মতো জবরদস্তি করারও কোনো দরকার নেই। দুটোই যদি পাশাপাশি পরিবেশন করা যায় শিক্ষার্থীর থালায়, তাতেও তো চলবে। মাক্স ম্যুলার ভবনে যখন জার্মান শেখায় তখন দেখছি বলেই দেয়, শব্দের আদিতে এস হরফটার উচ্চারণ দেশের উত্তরাঞ্চলে জ, সাতকে বলে জীবেন, কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে স, মানে ৭ অর্থে তারা সীবেন বলে। বিভিন্ন অধ্যাপকের কাছে দুরকম উচ্চারণ শোনার অভ্যেস হয়ে যায় ছাত্রদের। সেভাবেই ছোট-ছোট তফাতগুলোকে আসল প্রমিত ভাষা বনাম নেহাতই আঞ্চলিক উপভাষার বনামবিদ্ধ রাজনীতির উপলক্ষ করে না তুলে তার বদলে শিক্ষাদানের পাঠক্রমে ঢুকিয়ে নেওয়া যায়।
আর বড় তফাতগুলো? যে জায়গায় কেবেকের জাতিসত্তা ফ্রান্স থেকে আলাদা সেই নিজস্বতাবোধের সঙ্গে আলাপ হবে কী করে?
যে শিক্ষার্থী মোটা দাগের সর্বত্রগামী ফরাসিজ্ঞানে সন্তুষ্ট না থেকে বিশেষ করে ফ্রান্সকেই চিনতে চাইবেন, কিংবা কেবেককে, অথবা বেলজিয়ামকে, তাঁর তখন সেই জায়গার সাহিত্যে প্রবেশ না করলেই নয়। আজকাল ভাষাশিক্ষায় ধ্রুপদী সাহিত্যের পাশ কাটিয়ে চলার একটা দস্তুর আছে বটে। তবে সেটা আসলে জনসংযুক্ত দৈনন্দিন রচনার সঙ্গে আলাপ করার উপর জোর দেওয়ারই একটা ধরন। হয়তো বিদ্যার্থীকে বলা হবে খবরের কাগজ পড়তে। অথবা সেই এলাকার ওয়েব সাইট সার্ফ করতে। কিংবা সেখানকার টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ওয়েব থেকে ডাউনলোড করে দেখতে। সেটাও সাহিত্য। আর ধ্রুপদী রচনাবলির গুরুত্ব তো কারুর কারুর কাছে বড় হয়ে উঠবেই। মোটের উপর কথাটা দাঁড়াল, মিতবাক ব্যাকরণ আর অভিধানের পিঠে চড়ে যে শিক্ষার্থী সর্বত্রগামী গ.সা.গু. ফরাসিতে কৃতবিদ্য হতে পেরেছেন, তিনি পরবর্তী ঘাট পেরোবেন সাহিত্যের পথিক রূপে নিজের পায়ে হেঁটে। বৈয়াকরণ বা আভিধানিকের প্রণীত কোনো সানুপুঙ্খ সংকেতায়নের পিঠে তিনি আর চড়বেন না।
আদৌ সানুপুঙ্খ সংকেতায়নের কোনো ভূমিকা না থাকলেই ভালো হয় এরকম কথাই কি তাহলে বলতে চাইছি আমি?
যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলছি তার কোনো ঠিক-ভুল নিরূপণ হয়নি এখনও। সবই করে দেখার পর্যায়ে। এবং আমি তো আরাম-কেদারায় বসে কাগুজে নিরীক্ষা করেই খালাস। এ প্রয়াসের কতটুকু মূল্য আছে সে বিচার পাঠকের, বিশেষত যে পাঠক হাতে কলমে এই কাজ করতে চাইবেন সেই পাঠকের। এইসব সীমাবদ্ধতা মনে রেখেই বলছি, যেটুকু দেখতে পাচ্ছি সানুপুঙ্খ সংকেতায়নের প্রাসঙ্গিকতা থেকেই যাবে। প্রমিত ভাষার ব্যাকরণ আর অভিধানের দরকার হবে মাতৃভাষার উচ্চতর শিক্ষার জায়গাগুলোতে। কোনো দেশের বা রাজ্যের সরকার তথা নানাবিধ প্রকাশকীয় আর সম্পাদকীয় বেসরকার নিজের একরকম প্রাতিষ্ঠানিক দস্তখত রাখতে চায় তার সমস্ত প্রযোজনায়। সেই সমসত্ত্বতা আনবার জন্যে তার পরিচালকেরা যখন শিক্ষানবিশ উঠতি লেখকদের দেখিয়ে দেবে কী কীভাবে লেখা ওই রচনালয়ে কাঙ্ক্ষণীয় আর কী কী ধরন পরিহার্য, সেই মুহূর্তটা আকরগ্রন্থের। ভাষা যেহেতু ‘বহতা নীর’, সেহেতু ওই আকরগ্রন্থের চূড়ান্ত সংস্করণ কারুরই রচনাসামর্থ্যের নাগালের মধ্যে পড়ে না। সমবায়ের ধারাবাহিক চেষ্টায় অচূড়ান্ত কিন্তু প্রয়োজনের পক্ষে পর্যাপ্ত একটার পর একটা মোটামুটি তৃপ্তিকর সংস্করণ নির্মিত হতে থাকবে। এতে খানিকটা ভালো লাগলেই হল।
যাই হোক, এসব তো নেশন-রাষ্ট্রের সূচনাপর্বের স্বপ্নেরই নবতম কলেবরের গুণগান চলছে। প্রমিত ভাষার সানুপুঙ্খ ব্যাকরণ আর অভিধান এমন আর কী নতুন কথা, তাকে শিকাগো ম্যানুয়াল অভ স্টাইলই বলো আর যাই বলো। কিন্তু উপভাষার কী হইল? তাহার কি কোনো সানুপুঙ্খ বিবরণ রচিত হইবে না বলিয়া ধরিয়া লইতেছি?
কেবেকের সূত্রে একটু আগে ধরে নিয়েছিলাম সেখানকার সাহিত্য বলে একটা ব্যাপার আছে, যার অধ্রুপদী জায়গাটাকে চটজলদি চিনিয়ে দেবার জন্যে খবরের কাগজের, টেলিভিশনের, ওয়েব সাইটের উল্লেখ করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওই জায়গাটা অবশ্য দ্বিতীয় দফায় একটু চেপে ধরা দরকার। কাকে বলব কেবেকি সাহিত্য? খাস কেবেকি যে জবান গ্রামে গঞ্জে প্রাদেশিক নিজস্বতার স্বাক্ষর রাখে সেটার তো বৃহত্তর গ্রাহ্যতা জুটবে না, সবাই তো শহরে প্রবেশ করেই একরকম আম কেবেকি মিশ্রণ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে যায় যেটা প্রমিত ফরাসির মোটামুটি অনুরূপ কিন্তু অবিকল নকল নয়। কেবেক প্রদেশের সেই রীজনাল স্ট্যাণ্ডার্ড ওরফে আঞ্চলিক প্রমিত ফরাসিই কিন্তু ওখানকার দৈনন্দিন লঘু সাহিত্যেরও বাহন, ক্রমশ নিজস্ব পরিচিতি খুঁজে নিতে উদগ্রীব অলঘু রচনাবলিরও রঙ্গভূমি।
আঞ্চলিক প্রমিতির জায়গাটা চেহারা-সচেতন মিশ্রণের। অতএব আঞ্চলিক প্রমিত ভাষার সানুপুঙ্খ বিবরণ যাঁরা লিখবেন তাঁদেরও কাজ হবে ওই যে দর-কষাকষির জায়গাটাতে মিশ্রণের কারবারটা জরুরি হয়ে ওঠে ওইখানকার গল্পটা ফুটিয়ে তোলা। নিছক সেকেলে ভাষাতত্ত্বের গ্রন্থনবাদী সরঞ্জাম তো এই কাজের পক্ষে উপযোগী নয়ই, এমনকি সঞ্জননী বাজারের সাধারণ পণ্যসামগ্রীও এ ব্যাপারে গ্রন্থনবাদী কারখানার ধরন-ধারণ থেকে যথেষ্ট সরে আসতে পারেনি। তাহলে উপায়?
এখন হাতড়ে হাতড়ে, আলো ফুটছে এই ভরসা রেখে আবছা অন্ধকারে পথ চিনে নিয়ে কোথাও একটা পৌঁছতে পারলে তবে বাতি জ্বালতে পারব বলে আশা করবার সময়। কেউ যদি নিজের মশাল ধরে আর-কাউকে পথ দেখাতে চায়, তাহলে প্রদর্শক আর সহপথিক উভয় পক্ষেরই হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি। সেইসব বিপদ শিরোধার্য করেও তিনটে প্রস্তাব করে দেখছি। ঝুঁকি নিয়ে ভেবে তো আর লাভ নেই, বাঁচতে যদি হয় বেঁচে নে, মরতে হয় তো মর্‌ গো!
‘আঞ্চলিক প্রমিত ভাষা’ ব্যাপারটার আবাদের প্রধান শস্যক্ষেত্র কেবেক প্রদেশেই। সে ফসল গোলায় তুলতে চাইলে ফরাসিতে ঢুকতে হবে ঠিকই, যে পূর্বশর্ত কারুর কারুর কাছে মুশকিলের; তবে এ কাজ যাঁদের সাধ্যে কুলোবে, এই পাথেয় যাঁদের হাতে আসবে, তাঁদের দ্বিতীয় কোনো পাথেয়র প্রয়োজন হবার কথা নয়। দ্বিভাষিকতা গবেষণা আর অনুবাদতত্ত্ব চর্চার রাজধানী হিসেবে কেবেক পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে গেছে।
দ্বিতীয় প্রস্তাব – ভাষার সুচিন্তিত এবং প্রমিত মিশ্রণের রাজধানী হিসেবে একইভাবে শতাধিক বছরের মানসিক কৃষিকাজে বিশেষ ঋদ্ধি অর্জন করেছে কৃত্রিম সেতুভাষা এসপেরান্তো। সেই সমৃদ্ধ বিশ্বসাহিত্যের খোলা দরজা দিয়ে ঢোকা অনেকের পক্ষেই ফরাসি জার্মান শেখার চেয়ে পাঁচগুণ সহজ। এই মুহূর্তে বাদল সরকারের “বিশ্বভাষা এসপেরান্তো” পাঠ্যপুস্তকের মরণোত্তর দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হচ্ছে। যাঁরা এসপেরান্তো ভাষা শেখেন তাঁরা সেইসঙ্গে অঞ্চলের আত্মসম্মানের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রতিসাম্যবোধের সংস্কৃতির শিক্ষানবিশিতেও একরকম দীক্ষা পান সেইসঙ্গে। সেই দীক্ষা যে মানুষের পাথেয়, তিনি অনায়াসে উপভাষাভাষী হিসেবে নিজের সমবায়ের বিবরণমূলক আত্মজীবনী রচনার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
আর তৃতীয় প্রস্তাব হল, দ্বিসংকেতন ওরফে ডাইগ্লসিয়া নিয়ে ভাবিত যে ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণারীতি ‘কায়াবাদ’ বলে একটা এলাকায় সঞ্জননী মননের আলাদা জমিতে চাষ করে চলেছে, সেই কায়াবাদ, সেই সাবস্ট্যাণ্টিভিজম আমাদের মধ্যে যাঁরা উপভাষার সানুপুঙ্খ সংকেতায়ন লেখার কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন বা হাত দিতে চলেছেন তাঁদের তাত্ত্বিক সরঞ্জাম হিসেবে মনঃপূত হতেও পারে। তবে ফরাসি শেখার মতোই কায়াবাদ শেখাটাও এসপেরান্তোর চেয়ে বেশি মেহনত এবং ধৈর্যসাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
তিনটে প্রস্তাবই নিশ্চয়ই কোনো একজন ব্যক্তির কাজে লাগবে বলে জন্মায়নি, ভাষার যেমন অনেক উপভাষা থাকে তেমনি পাশাপাশি তিনখানা প্রস্তাব থাকতেই পারে, যাঁর যেটা নিজের মনের মতো জেলা বলে মনে হবে তিনি সেই অঞ্চলের কর্মোদ্যোগে যোগ দিয়ে দেখুন না, বনলে থেকে যাবেন, না বনলে মনে রাখবেন যে বহির্বঙ্গের যেকোনো শহরে গেলেই দেখা যায় পাঁচজন বাঙালি আছে বলে ছ-সাতটা দুর্গাপুজো চালু হয়ে গেছে, এই ঠাট্টাটার মুসলিম ভাষান্তর শিখিনি বলে দুঃখিত, যেকোনো নতুন কর্মীর অবশ্যকর্তব্য নিজের একক ব্যক্তিগত তাঁবু খাটিয়ে রীতিমতো শিক্ষাশিবির স্থাপন করা, হালকা মেজাজে কথা বলছি বলে ভাববেন না গুরুগম্ভীর উদবোধনের সুরে বেসুর আনতে আমি বদ্ধপরিকর, বর্তমান অনুচ্ছেদ কতটা অচূড়ান্ত সেটা বোঝাবার জন্যে পর পর দাঁড়ির বদলে কমার অবতারণা, আপনারা যাঁরা শুনতেই পাচ্ছেন আমার বয়ান পড়তে পারছেন না তাঁরা এভাবে লক্ষ করলেন যে কথা শোনা আর বয়ান পড়ার মধ্যে এমন সম্পর্ক বিদ্যমান যাকে গ্রন্থনবাদের ওই অমুককল্প আর অমুকবিকল্পের সরঞ্জাম দিয়ে অনুধাবন করা অসম্ভব, এবার আপনাদের ভেবে দেখতে বলব, আপনার রগে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কেউ যদি চেঁচিয়ে হুকুম জারি করে, এক্ষুনি বলুন, লেখাকে কথা বলার উপভাষা ভাববেন না কথা বলাকে লেখার উপভাষা ভাববেন, তখন আপনি প্রাণে বাঁচবার তাগিদে কাকে প্রমিত বলবেন, লিখিত বয়ানকে না মৌখিক বাচালতাকে, এইটা ভাবতে ভাবতে যে যার নিজের কাজে ফিরে যান, আমার নমস্কার এবং সালাম জানবেন, এখানে এতক্ষণ ধরে আমার বাচাল বয়ান বরদাস্ত করলেন বলে অনেক ধন্যবাদ, আন্তরিক শুক্রিয়া।

Labels: ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home