Sunday, December 16, 2012

Goddo o Bonkimcandro: Ubhoshanketoner prostaabonaa: PANCOM KISTI


।।উভসংকেতন।।

এই লেখায় আমরা গদ্য কাকে বলে জানি ধরে নিয়ে বঙ্কিমের গদ্যকে খুঁজতে বেরোইনি। বঙ্কিমচন্দ্র কে সেটা মোটামুটি জানি ধরে নিয়ে গদ্যের বঙ্কিমের সন্ধানে রওনা দিয়েছিলাম। সেজন্যেই পুণ্যশ্লোক রায় শিশির দাশদের খেই ধরে গদ্যজিজ্ঞাসা থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের যাত্রা, দ্বিসংকেতনের বুড়ি ছুঁয়ে। অনেক ঘাটের না হলেও দু-চারটে ঘাটের জল খেয়ে এখন কোথায় পৌঁছেছি আমরা?
   এ প্রশ্নের উত্তর সবটা যুক্তির ছকের নয়, অনেকটাই রুচির আর বিবেচনার। আশা করব, সাহিত্যের রস নিয়ে চর্চা করে যাঁরা হাত পাকিয়েছেন সেই সমালোচকবৃন্দ এ লেখায় প্রস্তাবিত সরঞ্জামের দুয়েকটা কলকব্জা নিজেদের রুচিমাফিক কাজে লাগিয়ে, আবহমান সাহিত্যতত্ত্বের যাবতীয় প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণপদ্ধতির সঙ্গে যেভাবে যা মেশাতে চাইবেন মিশিয়ে, বঙ্কিমের আর গদ্যের যুগপৎ পুনর্বিবেচনার এই প্রকল্পে যোগ দেবেন। বয়ানের নিবিষ্ট পঠন আর সবাক অনুধাবন রচনার কাজটা তাঁরাই ভাল পারেন। তাঁদের সহযোগিতা পেয়ে প্রকল্পটা আন্তর্বৈষয়িক পর্যায়ে পৌঁছোতে না পারা অবদি আমাদের এই খালি গলার গান ভিন্ন গত্যন্তর নেই।
   তাই কতদূর পৌঁছেছি সে প্রশ্নের একটা কাজ চালানো জবাব এখানেই প্রদেয়।
বঙ্কিমের কাছে আমাদের প্রধান প্রাপ্তির জায়গাটা এই। ভাষার একই অঙ্গে বহু জবানির খেলা জমিয়ে তোলার জন্যেই তো উপন্যাস বিখ্যাত। জবানির সঙ্গে জবানির সেই সম্পর্ক স্থাপনের প্রচলিত যে পাশাপাশি বা অনুভূমিক জ্যামিতি, সেটার বদলে যে একেকটা সম্পর্ক পাতানোর সময় অনুভূমিকের উপর দোতলা-একতলার অনুলম্ব জ্যামিতির ছায়াও না পড়ে পারে না, এই জরুরি কথাটা বঙ্কিমের উপন্যাসে নিহিত আছে।
উপন্যাসে জবানির বিভিন্নতা নিয়ে ভাষাতত্ত্বমনস্ক আধুনিক সাহিত্যচিন্তা যা শেখার প্রধানত শিখেছে মিখায়েল বাখতিন-এর রচনাবলি থেকে। কিন্তু বাখতিন জবানির সঙ্গে জবানির যে বিক্রিয়ার দিকে নজর টেনেছেন সেটা অনেকটাই পাশাপাশি বা অনুভূমিক পর্যায়ের। পাশাপাশি বলতে কী বোঝাতে চাইছি, সেটা দৃষ্টান্ত পেশ করলে দেখতে পাবেন সহজে। ধরুন ঘরে-বাইরে উপন্যাসে নিখিলেশের কথা, বিমলার কথা, সমস্ত জবানি যদি আখ্যায়কতার মঞ্চে বহুজিহ্ব এক জটিল আওয়াজে পর্যবসিত হত – যেটা অনেক উপন্যাসেই করা হয় – তখন সেরকম বয়ানে বাখতিন আমাদের দেখিয়ে দেন কী করে সেই বহুজবানির কাকলি থেকে একেকজনের কণ্ঠস্বর চিনে নিতে নিতেই লক্ষ করতে হয় যে, নিখিলেশের বিমলা আর সন্দীপের বিমলা যে একই ব্যক্তি, এই ঐক্যের অনুভূতিটা তার মনে যেদিন ফুটে উঠছে সেদিন সে কারুর বিমলা নয়, একান্ত নিজের বিমলা, এরকম জ্যামিতিহীন বিন্দুর সিদ্ধান্তে কোনো উপন্যাস কখনও সায় দেয় না। বিমলা নিজস্বতায় পৌঁছোতে চায় বলেই তার মনপ্রাণ দিয়ে জানতে পারা দরকার কোথায়, কী প্রক্রিয়ায় সে বিশেষ বিশেষ সঙ্গীর বিশেষ দিকের দোসর হয়ে উঠতে শিখেছে, আরো শিখবে। এই শিখতে পারার জায়গাটাকেই বলি উপন্যাস, সেখানে কুশীলবেরও শিক্ষানবিশি চলতে থাকে, তাদের বিক্রিয়ায় মগ্ন পাঠকেরাও পড়তে পড়তেই সেই মানবিক পূর্ণতার পথে তাঁদের যে যাত্রা তার সহযাত্রী হয়ে ওঠেন।
   বাখতিনের অতিরিক্ত যে উপাদান আমরা বঙ্কিমচন্দ্রে পাই তা হল অধিজবানির ‘অধিত্ব’-সম্বন্ধের যে জ্যামিতিগত জটিলতা সেটার বিশিষ্ট এক ভাষ্যের ইঙ্গিত। রাম যখন শ্যামের সঙ্গে আড্ডা মারতে বসে যদুকে নিয়ে মজা করছে তখন কি তাকে হেয় করে তারা নিজেদের উচ্চাসনে বসাল এটাই অনুলম্ব? গল্পটা অত সোজা নয়।
প্রথমত, সামাজিক প্রক্রিয়ার জায়গাটাতে যদু উঁচুতে না নিচুতে না সমানে সমানে তার উপর নির্ভর করে তাকে নিয়ে মজা করার রুচি প্রকাশ করার কী কী বিকল্প রাম আর শ্যামের হাতে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, উঁচু-নিচু-সমানের একাধিক কষ্টিপাথর থাকে সমাজে, সেই একই যদু সেই একই রাম-শ্যামের তুলনায় একরকম নিরিখে উঁচুতে থেকেও ভিন্ন নিরিখে নিচুতে থাকতে পারে।
কিন্তু এই অবদি তো বাখতিনকে খুঁটিয়ে পড়লেই পৌঁছোতে পারি আমরা, বঙ্কিমকে লাগবে কেন। বঙ্কিম আমাদের যেটা দেখিয়ে দেন তা হল, জবানিবিশেষের সঙ্গে মিশে থাকে দ্বিসংকেতনের মেরুচিত্রে সেই জবানির ভাষাগত অবস্থান – যে অবস্থান দ্বন্দ্বের অন্যতম উপজীব্য। অর্থাৎ রাম-শ্যামের সঙ্গে যদুর আপেক্ষিকতার ছক কষার কাজটা আমরা ভাষানিরপেক্ষ প্রণালিতে করতে গেলে ঠকব।
বঙ্কিম এছাড়া চোখে আঙুল দিয়ে এও দেখিয়ে দেন যে, উচ্চবর্তী দুর্গম দৃষ্টিকোণ থেকে যে অধিজবানির তির নিচের দিকে ছোটে, আর নিম্নবর্তী সুগম দৃষ্টিকোণ থেকে যে পালটা অধিজবানি উপরদিকে তাকিয়ে হাসে, তাদের প্রতিসম জ্যামিতি ফোকটে পাওয়া যায় না। সে প্রতিসাম্য প্রতিষ্ঠা করা সংগ্রামসাপেক্ষ; অর্থাৎ উভসংকেতন একটা সেতুর মতো নির্মিতি নয়, কাঁটাঝোপে কণ্টকিত ঢাল বেয়ে ওঠার আর নামার মতো কঠিন কাজ। সেই কঠিন সংগ্রামের জায়গাটাই সমাজে ব্যক্তির গণতান্ত্রিক নাগরিক সত্তায় উত্তীর্ণ হবার শিক্ষানবিশি; তার সঙ্গে মিশে থাকে ব্যক্তির জীবনযাপনের প্রত্যেকটা পরিবেশের সহচর-অধ্যুষিত আপাত-স্বতন্ত্র মহলের গল্প।
এসব কথা শোনার পর লেখার শেষ পাদে এসে ধৈর্য হারিয়ে কোনো কোনো পাঠক না বলে পারবেন না যে, সমানুপাতিক দ্বিপাক্ষিক মেজাজের বিশেষ ল্যাবোরেটরি এসপেরান্তো নিয়ে সাত কাহন গল্প ফাঁদবার পর এভাবে উভসংকেতন নাকি গাছ থেকে টুপ করে পড়ে না, সংগ্রাম করে অর্জন করতে হয়, এরকম উলটো পালটা কথা একই প্রবন্ধে বলা বেমানান।
এসপেরান্তো এমনভাবে গঠিত যে ভাষাটা শেখা সহজ। কিন্তু নিরপেক্ষ জবানির মতো কোনো একটা ইন্দ্রজাল ওই ভাষার ভাষীরা আবিষ্কার করে ফেলেছে, এরকম আজগুবি দাবি তো করেনি কেউ। পাহাড়ের চড়াই উতরাই শক্ত কাজ; নাবালকের কাছে যাতে সেটা খেলার মতো অনায়াস দেখায় সেজন্যে সুস্থ সচেতন অভিভাবকেরা তাকে গল্প বলে ভুলিয়ে জীবনসংগ্রামে দীক্ষা দেয় ঠিকই, আমাদের মনের গভীরে সেইসব গল্পের মধুর স্বাদ থেকেও যায় বলে ভাবতে ইচ্ছে করে জীবনযাপন সোজা কাজ, সেই ইচ্ছেটা তো বড়দের সাহায্যে অর্জিত সাহসেরই অন্তরঙ্গ চেহারা। এসপেরান্তোর বাইরের খোলসে ওই গল্পের স্বাদ হয়তো একটু বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু কেউ তো বলিনি নিরপেক্ষ ভাষা মানে নিরপেক্ষ জবানি।
বঙ্কিম আমাদের দেখতে সাহায্য করেন কথাবার্তার নিরপেক্ষতা বা প্রতিসাম্য কাকে বলে, কীভাবে ক্রমশ অর্জন করতে হয়। কথার ঘাম বার্তায় ফেলা সোজা পরিশ্রম নয়। বঙ্কিমের উপন্যাস পড়ে আমরা সমানুপাতিক কথাবার্তার নিম্নোক্ত মূলসূত্রের আভাস দেখতে পাই।
কোনো-কোনো বাগ্‌বিনিময়ে একটা জবানিকে ভিন-জবানির সঙ্গে অধিত্বের সম্পর্ক পাতাতেই হয়; এ না হলে উপন্যাসও দাঁড়ায় না, জীবনও ঘ্যাঁচ করে আটকে যায়। সেই অধিত্বের সম্বন্ধে যে আপাত অনুলম্ব ভঙ্গি থাকতে বাধ্য সেটা নেহাতই কথার ধরন; তার নিরীহতা পিছনে লাগার সঙ্গে অত্যাচারের বর্গভেদ বজায় রাখে। সেই একই অধিত্বের সম্বন্ধে যে অনুভূমিক প্রতিশ্রুতি থাকে সেখানেই সেই কাণ্টীয় ইঙ্গিত পাই যার অনুশীলিত মূর্ত চেহারা এসপেরান্তোর মতো সমানুপাতিক প্রকল্পে অধিত্ব-সাধারণীকরণের রূপায়ণ খোঁজে (এবং অনেকটাই পেয়েও যায়; সুধীবৃন্দ ব্যর্থতার গল্প শুনতে এত অভ্যস্ত যে সাফল্যের নমুনা চোখের সামনে পেলেও তাকিয়ে দেখেন না)।
   গণতান্ত্রিক নাগরিকত্বের যে প্রতিশ্রুতিতে বঙ্কিম তাঁর পাঠকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার মর্যাদা রাখতে আজকের দিনের পাঠকেরা পারছে কিনা এ প্রশ্ন বাঙালিদের একার নয় – তেলুগু কন্নড় মারাঠি গুজরাটি হিন্দি অনুবাদে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস ভারতবর্ষ আত্মসাৎ করে নিয়েছে অনেক দিন হল, সেজন্যে যে বিস্তীর্ণ সমালোচকীয় বৃত্ত রচনার দায়িত্ব বসে আছে সেটা কেউই পালন করতে পেরে ওঠেনি একশো দেড়শো পৌনে দুশোর নামতার ঔপচারিক অত্যাচারের মধ্যে। ওসব দায়িত্বের কথা গম্ভীর মুখে উল্লেখ করলেও সকলেরই মাথা ধরে যাবে, আশা করি আমার মুচকি হাসি দেখতে পাচ্ছেন। আমি খালি মনে করিয়ে দিচ্ছি, বড় প্রশ্নটা সারা ভারতে গণতান্ত্রিক মেজাজের পরিস্ফুটনের। আর যে মাঝারি পর্যায়ের প্রশ্নটা কচলে কচলে ছিবড়ে করে দিলাম সেটা গদ্যের নির্বিশেষ তত্ত্বরচনার এলাকায় বঙ্কিমের অবদানের প্রশ্ন। আশা করি পাঠক মানবেন, এ দুটো প্রশ্নের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে, দেখতে পাবেন যে আমরা বঙ্কিমের গদ্যে গণতান্ত্রিক মেজাজের প্রবর্তনার জায়গাটা দেখতে না পেলে তাত্ত্বিক স্বপ্নের পোলাওয়ে কোনোরকম ঘৃতাহুতির সম্ভাবনার ছিটেফোঁটাও নেই।


সূত্রনির্দেশ

(প্রথমে অকারাদিক্রমে বাংলায়, তারপর A-কারাদিক্রমে ইংরেজিতে)

চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র। ১৮৬৫/১৯৮৪। দুর্গেশনন্দিনী। বঙ্কিম রচনাবলী ১। সম্পাদনা ও ভূমিকা ক্ষেত্র গুপ্ত। কলকাতা: পাত্র’জ। ১-৭৫।

চৌধুরি, প্রমথ। ১৯৬৮। সবুজ পত্রের মুখপত্র। [প্রথম প্রকাশ, সবুজপত্র বৈশাখ ১৩২১]। প্রবন্ধসংগ্রহ। কলকাতা: বিশ্বভারতী। ২৫-৩০।

ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ। ১৯৮৪। বাংলা শব্দতত্ত্ব। ৩য় সংস্করণ। কলকাতা: বিশ্বভারতী।

দাশ, শিশিরকুমার। ১৯৮৫। গদ্য ও পদ্যের দ্বন্দ্ব। কলকাতা: দে’জ।

দাশগুপ্ত, প্রবাল। ১৯৭৮। ‘অতি অল্প হইল’-র গদ্যের দ্বিধা। গাঙ্গেয় পত্র ৬।২৬-৩০।

দাশগুপ্ত, প্রবাল। ২০১২ক। ভারতে ইংরিজির অবস্থানের ‘মাসির ভাষা’ বিশ্লেষণ। জিজ্ঞাসা ৩০:১-২।৬৯-৭৯।

দাশগুপ্ত, প্রবাল। ২০১২খ। স্তোতাকাহিনি। অনুষ্টুপ ৪৬:৩।১০৯-১২৬।

দাশগুপ্ত, প্রবাল। ২০১৩। সীমান্ত-বিবাদের সুরাহার গ্রন্থনবাদী অন্বেষণ। আলোচনাচক্র ৩৪ (বইমেলা সংখ্যা)।


Abel, Rekha. 1998. Diglossia as a linguistic reality. Rajendra Singh (ed.) Yearbook of South Asian Languages and Linguistics 1998. New Delhi: Sage. 83-103.

Bakhtin, Mikhail Mikhailovich. [1941, 1965]. Rabelais and His World. Trans. Hélène Iswolsky. Bloomington: Indiana University Press, 1993.

Britto, Francis. 1986. Diglossia: A Study of the Theory with Application to Tamil. Washington, D.C.: Georgetown U.P.

Chatterjee, Bankimchandra. 1996. Rajmohan’s Wife: A Novel. Ed. and intr. Meenakshi Mukherjee. [First serialized in Indian Field in 1864.] Delhi: Ravi Dayal.

Dasgupta, Probal. 1993. The Otherness of English: India’s Auntie Tongue Syndrome. New Delhi/ Thousand Oaks/ London: Sage.

Dasgupta, Probal. 2010. Compositionality, the prose default and poetry: a cognitive approach. International Journal of Mind, Brain and Cognition 1:2.55-76.

Dasgupta, Probal. 2011. Inhabiting Human Languages: The Substantivist Visualization. Delhi: Samskriti, for the Indian Council of Philosophical Research.

Ducrot, Oswald. 1984. Le dire et le dit. Paris: Minuit.

Ferguson, Charles A. 1959. Diglossia. Word 15:2.325-40.  

Fishman, Joshua. 1967. Bilingualism with and without diglossia; diglossia with and without bilingualism. Journal of Social Issues 23:2.29-38.       

Grice, H.P. 1975. Logic and conversation. Peter Cole et al. (eds.) Syntax and Semantics 3: Speech Acts. 41-58.

Historio por malfermi estontecon: Moderna historio de Chinio, Japanio kaj Koreio. 2007. Authors: Redaktokomitato de Lernolibro de Komuna Historio de Chinio, Japanio kaj Koreio. Tr: Yu Tao, Satoo Morio, Lee Chong-yeong. Beijing: Fremdlingva Eldonejo.

Jakobson, Roman. Linguistics and poetics. In Thomas A. Sebeok (ed.) 1960. Style in Language. Cambridge: MIT Press. Reprinted in Richard DeGeorge, Fernande DeGeorge (eds.) The Structuralists: From Marx to Lévi-Strauss. Garden City, NY: Anchor Books. 85-122.

Ray, Punya Sloka. 1963. Language Standardization: Studies in Prescriptive Linguistics. The Hague: Mouton.

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home